উমাইয়াহ খিলাফতের অন্তিম অধ্যায়ে আন্দালুসে খাওয়ারিজদের ব্যর্থ অভ্যুত্থান

✍🏻 বশীর সাদাত

#image_title

ইতিহাসের বিবর্ণ প্রান্তরে খাওয়ারিজরা এক শোকাবহ অধ্যায়। তারা চরমপন্থা ও কঠোরতার এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা কেবল মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্টই করেনি, বরং ইসলামের নামকে কলঙ্কিত করেছে। তাদের বিভ্রান্তিমূলক আদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তারা বারবার মুসলিম সমাজে ধ্বংস ও অস্থিরতার সঞ্চার করেছে।

তাদের নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম যুগ। রক্তাক্ত হয়েছেন হযরত উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং বহু মহৎ সাহাবি, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আলিম ও মুজাহিদ। আজও তাদের চরমপন্থা উম্মাহর ঐক্যের পথে এক অনতিক্রম্য বাধা।

ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মুসলিম উম্মাহর ওপর খাওয়ারিজদের আঘাত ছিল ক্রুসেডার কিংবা খ্রিস্টান সন্ত্রাসীদের আঘাতের চেয়েও গভীর। উমাইয়াহ ও আব্বাসী খিলাফতের দিনগুলিতে, এমনকি বিভিন্ন ইসলামী যুগেও তাদের তরবারি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে না উঠে উল্টো মুসলিমদের রক্তে কলঙ্কিত হয়েছে।

আন্দালুস বিজয়ের পর মুসলিমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশে বসবাস করছিল। প্রায় ১৩৮ হিজরি পর্যন্ত কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তাহীনতার ছায়া তাদের জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি।

আন্দালুসে ইসলামের ভিত্তি এতটাই দৃঢ় ছিল যে, কোনো বাহ্যিক শক্তি তা নষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু ১৩৮ হিজরিতে মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে খাওয়ারিজরা গোপনে শাম (সিরিয়া) অঞ্চল থেকে আন্দালুসে প্রবেশ করে এবং বার্বার জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। ইউসুফ ইবন আবদুর রহমান আল ফিহরীর শাসনের যুলুমের কারণে বার্বারদের মধ্যে যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল, তা খাওয়ারিজরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল এই জনগোষ্ঠীকে ইসলামের মূলধারার পথ থেকে সরিয়ে উগ্রতা ও কঠোরতার দিকে ঠেলে দেয়া।

চরমপন্থার দ্রুত বিস্তার
ইতিহাসবিদদের ভাষ্যমতে খাওয়ারিজদের উগ্র মতবাদ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দালুসের ইসলামী সভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। তারা বিশিষ্ট, যোগ্য ও জ্ঞানী আলিমদের সমাজ থেকে সরিয়ে দেয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য নানাবিধ প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।

আবদুর রহমান আদ-দাখিল: এক আলোকবর্তিকা
সময়ের পরিক্রমায় আন্দালুসে এক মহান বীরের আগমন ঘটে, যিনি উমাইয়াহ খিলাফতের শেষ উত্তরাধিকারী আবদুর রহমান ইবন মু’য়াবিয়া ইবন হিশাম আদ-দাখিল রহিমাহুল্লাহ। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব খাওয়ারিজ এবং অন্যান্য অনুরূপ বিভ্রান্তিমূলক আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটায়। তিনি আন্দালুস এবং ইসলামী সমাজ থেকে এই বিশৃঙ্খলা দূর করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

উপসংহার: এক উজ্জ্বল অধ্যায়
আবদুর রহমান আদ দাখিলের দূরদর্শী নেতৃত্ব কেবল খাওয়ারিজদের অন্তঃসারশূন্য চক্রান্ত ব্যর্থই করেনি, বরং উম্মাহর ঐক্য ও স্থিতিশীলতার এক চিরন্তন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তাঁর অদম্য নেতৃত্ব আন্দালুসকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়। ইসলামের ইতিহাসে তাঁর অবদান এক দীপ্ত জ্যোতিষ্ক হয়ে থাকবে, যা আগামী প্রজন্মকে ঐক্যের শক্তি ও নেতৃত্বের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

 

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version