আমানুল্লাহ খান: ব্রিটিশবিরোধী জিহাদের ফলাফল বিনষ্টকারী

#image_title

মূল: উসমান আহমাদ যাই

সম্পাদনা: আবু জুনদাব আবদুল্লাহ

 

ব্রিটিশরা আফগানিস্তানকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়, যাতে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ঘাঁটি স্থাপন করতে পারে এবং এর অগ্রগতি বন্ধ করতে পারে।

ব্রিটিশরা আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার ও সামরিক উপস্থিতির জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইয়াকুব খানের সাথে “ঘন্দমক” চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রচেষ্টা সফল হয়। এই চুক্তির পর ব্রিটিশরা আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে এবং বৈদেশিক বিষয়ে আফগানদের সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সমস্ত বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা করে।

এসব বহু দশক ধরে এভাবেই চলে আসছিল। অবশেষে সুপ্ত বারুদ দীনদার শ্রেণী অন্তরে বিদ্রোহের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। ব্রিটিশরাও তাদের লক্ষ্য অর্জন ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আফগানিস্তানের সাথে তিনটি বড় বড় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তৃতীয় যুদ্ধে প্রচণ্ড সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে আফগানিস্তান ১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের পরাজিত করে বিজয় লাভ করে। এ বিজয় আফগানিস্তানকে যেকোনো ধরনের প্রভাব বা ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হয়ে এক স্বাধীন ও নিরাপদ শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার পথকে প্রশস্ত করে। যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুল্লাহ খানের তৃতীয় পুত্র আমানুল্লাহ খান। হাবিবুল্লাহ খানের মৃত্যুর পর আমানুল্লাহ খান সিংহাসনে আসীন হন।

বিজয়ের পর আমানুল্লাহ খান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকলেও তিনি মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের পরিবর্তে বিদেশি সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী ছিলেন। কাবুলকে দীনের মারকায হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আখড়ায় পরিণত করেন। মহিলারা অর্ধনগ্ন পোশাক পরতে শুরু করে, যুবতী মেয়েদের শিক্ষার নামে বিদেশে পাঠানো শুরু হয়। আফগানিস্তানে অশ্লীলতা ও নগ্নতা ছড়ানোর নতুন নতুন পদ্ধতি আমদানি করতে তিনি নিজেও বহু মাস বিদেশ ভ্রমণে কাটাতেন।

ধর্মহীনতা, অশ্লীলতা, নগ্নতা ও গণতন্ত্রকে আমানুল্লাহ এবং সুশীল প্রগতিশীল ভক্তরা সভ্যতা ও উন্নয়ন বলে দাবি করে। তার শাসনের নয় বছরের মাথায় সমাজের অবস্থা জনগণের, বিশেষ করে দীনদার শ্রেণীর সহ্যের বাইরে চলে যায়। অবশেষে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনতা তাকে উৎখাত করলে তিনি ইউরোপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু আজও তার বিষাক্ত ভাবনার প্রভাব আমাদের সমাজে দেখা যায়।

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version