আইএস একটি মহামারির নাম

[একাদশ পর্ব]

#image_title

✍ আবু হাজার আল কুর্দি


 

দেইর আয যুরে আইএসআইএস কর্তৃক সংঘটিত অপরাধসমূহ:

দেইর আয যুর সিরিয়ার পূর্বে অবস্থিত একটি প্রদেশ যেটি গৃহযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে আইএসআইএসের শাসনাধীনকালে ভয়াবহ অপরাধের কেন্দ্রস্থল ছিল।

এর কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে এই এলাকাটি দাঈশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এলাকাটি ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১. প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড, মুজাহিদীন ও সাধারণ নাগরিকদের অধিকার হরণ:

দাঈশের দ্বারা প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড ছিল ভয় জাগিয়ে তোলার এবং সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি মাধ্যম। যাদেরকে কুফর-ইরতিদাদ, জিহাদি আন্দোলনের সমর্থন ও তাদের বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার করা হতো; তাদের সবাইকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো। এই মৃত্যুদণ্ড কর্যক্রম অন্য লোকেদের হৃদয়ে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য প্রকাশ্য স্থানে চালানো হতো।

নৃশংস হত্যা: গুলি, শিরশ্ছেদ এবং জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বহু লোককে।

পারিবারিক অধিকার লঙ্ঘন: নিহতদের পরিবারের জন্য শুধু শোক পালন করাই নিষিদ্ধ ছিল না বরং ভয়ে ও নীরবে জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়েছিল তাদের।

২. মুক্তিপণের জন্য অপহরণ:

লোকেদের, বিশেষ করে যুবক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অপহরণ করাও আইএসআইএসের একটি কৌশল ছিল যার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:
(ক) চাঁদাবাজি: দাঈশ অপহৃতদের মুক্তির বিনিময়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ দাবি করতো।
(খ) মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার: অপহরণকারীদের যুদ্ধের সময় মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো, ফলে তারা আইএসআইএসের প্রতিপক্ষদের টার্গেট হয়ে প্রাণ হারাতো।
(গ) নারীদের যৌন হয়রানি ও শোষণ: দেইর আয যুরে অমুসলিম মহিলা এবং মেয়েরা পদ্ধতিগত যৌন সহিংসতার শিকার হতো, আইএসআইএস মহিলাদের গণিমতের মাল হিসাবে বিবেচনা করতো।
(বি.দ্র. অমুসলিম বলতে শিয়াদের বোঝানো হয়েছে)
(ঘ) নারীদের ক্রয়-বিক্রয়: ইয়াজিদি এবং অন্যান্য অমুসলিম নারীদের বাজারে বিক্রি করা হতো এবং তাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
(ঙ) সহিংসতা ও জবরদস্তি: অনেক নারী শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হয়েছে।

৪. নিষ্ঠুর আইন প্রয়োগ:

দাঈশ নিষ্ঠুর আইন ও কঠোর শাস্তি কার্যকর করার জন্য মানুষকে ভয় দেখানো এবং ভয় দেখানোর জন্য সব ধরনের অবৈধ উপায় ব্যবহার করেছে।

৫. অর্থনীতি ও অবকাঠামো ধ্বংস:

আইএসআইএস এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেলের ফায়দা লুটেছে যাতে নিজেদের কার্যক্রম তহবিল ভারি করা যায়।

(ক) অবকাঠামো ধ্বংস: অর্থনৈতিক অবকাঠামো যেমন বাজার এবং শিক্ষাকেন্দ্র আইএসআইএসের শাসনামলে ধ্বংস করা হয়েছিল, তখন অনেক কারখানা এবং কৃষি এলাকা ধ্বংস হয়ে যায় বা ধ্বংস করে ফেলা হয়।
(খ) বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা: অর্থনীতির পতনের কারণে বেকারত্ব বেড়েছিল এবং মানুষ মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।

৬. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনসমূহ ধ্বংস:

আইএসআইএস দেইর আয যুরে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভগুলি ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ নিয়েছিল।

(ক) ঐতিহাসিক ভবন ধ্বংস: মসজিদ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবন যা স্থানীয় জনগণের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ছিল, সেগুলি ধ্বংস করা হয়। শুধুমাত্র ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট স্মৃতিচিহ্নগুলিকেই মুছে ফেলা হয়নি বরং সেই কর্মগুলির সাংস্কৃতিক পরিচয়কেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিল।
(খ) বৈধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা: সকল সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং যেকোনো নির্দেশ লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো।

ফলাফল:

২০১৭ সালে দাঈশের পরাজয়ের পর দেইর আয যুরে এ সমস্ত অপরাধের প্রমাণ এবং হাজার হাজার গণকবর— দাঈশ দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরে, ভিক্টিমদের অধিকাংশই ছিল সুন্নি এবং মুজাহিদীন।

(এটিই খুব সম্ভবত এই সিরিজের শেষ পর্ব, তবে আল মিরসাদ বাংলা এব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নয়)

Exit mobile version