দাঈশ : আদি থেকে অন্ত

[চতুর্থ পর্ব]

#image_title

তাহির আহরার

 

ইরাকের সুন্নি জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত হলো। শায়খ আবু মুসআব জারকাভি তাঁর জীবদ্দশায় আল কায়েদার প্রতি বাইয়াত ভেঙেছিলেন— একথা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদগণ কখনোই প্রমাণ করতে পারবেন না। হ্যাঁ এটা ঠিক যে, কিছু বিষয়ে আল কায়েদার নেতাদের সাথে তাঁর মতপার্থক্য ছিল, ব্যস এটুকুই।

শায়খ আবু মুসআব জারকাভির শাহাদাতের পর সবচেয়ে বড় মতবিরোধ দেখা দেয় যুদ্ধের লক্ষ্য নিয়ে। সমস্ত মনোযোগ মার্কিন বাহিনী এবং তাদের মিত্রদের দিকে নিবদ্ধ করা ছিল আল কায়েদা নেতাগণের লক্ষ্য। তখন একপক্ষ বলেছিল মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিয়া মিলিশিয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও তাদের সুন্নি সমর্থকরা। যুদ্ধের মূল লক্ষ্যবস্তু বাদ দিয়ে সেকেন্ডারি টার্গেটের দিকে মনোযোগ দেয়াকে আল কায়েদা অনুমোদন করেনি।

ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডিলান লিখেছেন:
❝আবু মুসআব জারকাভির শাহাদাতের পর ইরাকে একটি অত্যন্ত জটিল যুদ্ধ শুরু হয়। বেশিরভাগ সুন্নিদের হত্যা করা হয়েছিল একারণে যে, তারা সশস্ত্র না হলেও সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। আবু মুসআব ইরাকি সুন্নিদের কাছ থেকে মুজাহিদীনদের প্রতি যে সমর্থন, ভালোবাসা ও সহোযোগিতা পেয়েছিলেন তা নিমিষেধ ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মুজাহিদীনদের সাথে সম্পৃক্ত সুন্নীদের সকল আশা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।❞

তখন শিয়া সম্প্রদায়কে হত্যা পান্তাভাত ছিল। তাদের সম্পত্তিকে হালাল গণিমত ঘোষণা করা হয়েছিল। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের দাস বানানো হয়েছিল। এসব পরিস্থিতি উল্লেখ করে ইরাকি আল কায়েদার মুজাহিদীনগণ তাদের জেনারেল আমির শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরিকে একটি চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরি এসব করতে সকল মুজাহিদীনকে চিঠিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসে না বরং সবকিছু আগের মতোই রয়ে যায়। সাধারণ মুসলিমদের হত্যাযজ্ঞ, লুটপাটের বাজার গরম থেকে যায়।

শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরি সীমান্তের ওপারের সিরিয়ান সুন্নিদের একটি সংগঠিত দলে একত্রিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেন যাতে সিরিয়া এবং ইরাকি সুন্নিরা মিলে বড় কোনো পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্নোক্ত কারণে এ ধরনের সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল,
প্রথম কারণ: ইরাকি সুন্নিদের উপর আক্রমণ আমেরিকা এবং তাদের মিত্রদের লক্ষ্য ছিল।
দ্বিতীয় কারণ: ইরাকি সুন্নিরা চরম কট্টরপন্থী শিয়া মিলিশিয়াদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, এছাড়াও সুন্নি ও শিয়াদের একে অপরের সাথে মতবিরোধে ছিল।
তৃতীয় কারণ: প্রক্সি সুন্নি সংগঠনগুলোও ইরাকি জনগণের ওপর নৃশংসতা চালায়। এমনকি তাদের অনেককে কাফন-দাফন পর্যন্ত হয়নি বরং গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিল।

চলবে….

Exit mobile version