খলিফা হারুন আর রশীদ রহ.–এর বিরুদ্ধে খাওয়ারিজদের বিদ্রোহ

✍🏻 আসাদ ঘোরজঙ্গ

#image_title

ইসলামের ইতিহাসে খাওয়ারিজরা এক দীর্ঘতম চরমপন্থী অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের কঠোর ও অযৌক্তিক মতাদর্শের কারণে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সামষ্টিক সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যুগে যুগে তারা তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে, যার ফলশ্রুতিতে ব্যাপক প্রাণহানি ছাড়াও মুসলিম সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম দিককার ইসলামি যুগে, বিশেষ করে উমাইয়াহ খিলাফতের পর খাওয়ারিজরা আব্বাসী খিলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ করেছিল। খলিফা হারুন আর রশীদের রহ. খিলাফতের সময়ে খাওয়ারিজরা খোরাসান, ইরাক এবং পারস্যের কিছু অংশে বিদ্রোহ করে। তারা সাধারণত কেন্দ্রীয় শাসনের বৈধতা অস্বীকার করতো এবং ন্যায্যতা ও ধর্মীয় বিশুদ্ধতার নামে তাদের বিদ্রোহকে বৈধতা দিত। এসব বিদ্রোহ খিলাফতের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এবং সেগুলো দমন করতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা শুরু হয়।

১৭৮ হিজরিতে ওয়ালিদ ইবন তারিফের নেতৃত্বে খাওয়ারিজরা আরব উপদ্বীপে হারুন আর রশীদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ এতটাই তীব্র ও বিপজ্জনক ছিল যে, একাধিক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী তাদের কাছে পরাজিত হয়।

এই সংকট মোকাবিলায় হারুন আর রশীদ মাআন ইবনে যায়েদা আশ শাইবানী রহ.–কে (যিনি ইয়াজিদ নামেও পরিচিত) বিদ্রোহ দমন করতে নিয়োগ দেন। ইয়াজিদ ছিলেন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনাপতি। তিনি এবং বিদ্রোহী নেতা ওয়ালিদ একই গোত্রের সদস্য ছিলেন। এ কারণে ইয়াজিদ প্রাথমিকভাবে যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেন।

কিন্তু ইয়াজিদের এই ধীর পদক্ষেপ নিয়ে সেনাবাহিনীর উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা হারুন আর রশীদের কাছে অভিযোগ জানান। তারা দাবি করেন, ইয়াজিদ ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ বিলম্বিত করছেন। এরপর হারুন আর রশীদ কঠোরভাবে নির্দেশ দেন যে, ইয়াজিদ যেন দ্রুত ওয়ালিদকে পরাজিত করে বিদ্রোহের অবসান ঘটান।

ইয়াজিদ ওয়ালিদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেন, “আল্লাহর বান্দাদের হত্যা করে কী লাভ? আসুন আমরা ব্যক্তিগতভাবে মুখোমুখি হয়ে এই সমস্যার সমাধান করি।” ইয়াজিদের আহ্বান পেয়ে ওয়ালিদ দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়।

দু’জন নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তলোয়ার চালান আর উভয় পক্ষের সৈন্যরা তা নীরবে প্রত্যক্ষ করে। অবশেষে ওয়ালিদ নিহত হন এবং তার অনুসারীরা বিদ্রোহ ত্যাগ করে। এভাবেই হারুন আর রশীদের খেলাফত খাওয়ারিজদের ভয়াবহ হুমকি থেকে মুক্তি পায়।

Abu Jundab Abdullah
Exit mobile version